আহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়! বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার নাম শুনলেই কেমন যেন একটা তারুণ্যের স্পন্দন অনুভব করা যায়। আপনি যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নিয়ে একটু দ্বিধায় থাকেন, বা জানতে চান এর আশেপাশের পরিবেশ কেমন, তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন! এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেবে, যা আপনাকে এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দিতে সাহায্য করবে। চলুন, আর দেরি না করে ঝাঁপিয়ে পড়ি এই জ্ঞান সমুদ্রে!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কোথায়?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর সুনির্দিষ্ট ঠিকানা হলো – ৯-১০, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সাদারঘাট, ঢাকা ১১০০, বাংলাদেশ। বুড়িগঙ্গা নদীর পাশেই অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকার অন্যতম ঐতিহাসিক এবং কেন্দ্রীয় এলাকায় অবস্থিত। আপনি যদি ঢাকার পুরানো অংশ চেনেন, তাহলে সাদারঘাট বা ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছাকাছি এর অবস্থান সহজেই বুঝতে পারবেন। এই এলাকাটি তার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার জন্য বেশ পরিচিত।
ক্যাম্পাসের অবস্থান ও পরিচিতি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসটি ঢাকার সাদারঘাট এলাকায় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত। এটি একটি পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী এলাকা, যেখানে আধুনিকতা এবং ইতিহাসের এক চমৎকার মিশ্রণ ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত হলেও, এর ভেতরের পরিবেশ বেশ শান্ত এবং শিক্ষাবান্ধব।
পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ
আপনি যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবেন, তখন ঢাকার পুরনো ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাবেন। এখানকার সরু গলি, পুরনো দালানকোঠা এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা আপনাকে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যাবে। এটি শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি ঢাকার ইতিহাসের একটি অংশ। Mapcarta অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে পোগোস স্কুল, সেন্ট থমাস চার্চ এবং ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস: এক দীর্ঘ পথচলা
আপনি কি জানেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আজকের অবস্থানে আসতে কত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে? এর ইতিহাস প্রায় দেড় শতাব্দীর পুরনো! ১৮৫৮ সালে ‘ঢাকা ব্রাহ্মা স্কুল’ হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এটি আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
- ১৮৫৮ সাল: ‘ঢাকা ব্রাহ্মা স্কুল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৮৭২ সাল: নাম পরিবর্তন হয়ে ‘জগন্নাথ স্কুল’ হয়।
- ১৮৮৪ সাল: ‘জগন্নাথ কলেজ’ হিসেবে উন্নীত হয়।
- ১৯৬৮ সাল: তৎকালীন পাকিস্তানি সরকারের অধীনে আসে।
- ২০০৫ সাল: এক দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের পর এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। Wikipedia থেকে জানা যায়, এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
এই দীর্ঘ পথচলা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে।
নতুন দিগন্ত: কেরানীগঞ্জের নতুন ক্যাম্পাস
আপনি হয়তো শুনেছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নতুন ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে। এটি একটি বিশাল প্রকল্প, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ প্রসারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেরানীগঞ্জের স্বপ্নীল যাত্রা
বর্তমানে ৮১ হেক্টর (প্রায় ২০০ একর) এলাকা জুড়ে একটি নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন, যা ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। Tripomatic এর তথ্যমতে, এই নতুন ক্যাম্পাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান ও গবেষণার জন্য একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন কেন্দ্র হবে। যখন এই ক্যাম্পাসটি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে, তখন এটি শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশাল জায়গা, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং গবেষণার চমৎকার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করবে।
ক্যাম্পাসের ধরন | অবস্থান | আয়তন (আনুমানিক) | বর্তমান অবস্থা |
---|---|---|---|
প্রধান ক্যাম্পাস | সাদারঘাট, ঢাকা | সীমিত | চালু |
নতুন ক্যাম্পাস | কেরানীগঞ্জ, ঢাকা | ৮১ হেক্টর (২০০ একর) | নির্মাণাধীন |
মোট ক্যাম্পাস এলাকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ক্যাম্পাস এলাকা প্রায় ৮৫ হেক্টর (২১০ একর), যা তিনটি ক্যাম্পাস এবং একটি নারী আবাসিক হল নিয়ে গঠিত। নতুন ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শেষ হলে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো এবং শিক্ষাব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, পুরো দেশের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো ও যোগাযোগ
আপনি যদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চান বা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চান, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনার জানা দরকার।
প্রশাসনিক পদাধিকারীগণ
- উপাচার্য: প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম
- রেজিস্ট্রার (ইন-চার্জ): প্রফেসর ড. মোঃ শেখ গিয়াশ উদ্দিন
এঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
যোগাযোগের তথ্য
- ফোন: +৮৮-০২-৯৫৩৪২৫৫, ৭১১০৪১৫
- ইমেইল: info@jnu.ac.bd
- ওয়েবসাইট: www.jnu.ac.bd
আপনি চাইলে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। University Grants Commission Bangladesh এর ওয়েবসাইটেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে কী আছে?
আপনি যদি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী হন বা শুধু এর আশেপাশে ঘুরতে চান, তাহলে জেনে রাখা ভালো যে এর আশেপাশে অনেক ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে।
ঐতিহাসিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান
- পোগোস স্কুল: এটি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছাকাছি অবস্থিত।
- সেন্ট থমাস চার্চ: ঢাকা শহরের একটি ঐতিহ্যবাহী ক্যাথেড্রাল চার্চ, যা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ২১০ মিটার দূরে অবস্থিত। এর স্থাপত্যশৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে।
- ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল: বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন স্কুল, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত।
এই স্থানগুলো আপনাকে ঢাকার পুরনো ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে এবং একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেবে।
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সবসময় সচেষ্ট। আপনি জেনে খুশি হবেন যে, ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো একটি নারী আবাসিক হল চালু করেছে, যা শুধুমাত্র মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য। এটি নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক আবাসন নিশ্চিত করেছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা আপনার মনে আসতে পারে:
১. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়?
হ্যাঁ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে এটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস কোথায় অবস্থিত?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। এটি একটি বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মাণাধীন রয়েছে এবং ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাদান কেন্দ্র হবে।
৩. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া কেমন?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।
৪. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী অনুষদ ও বিভাগ রয়েছে?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্সেস এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ রয়েছে। এখানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
৫. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে থাকার ভালো ব্যবস্থা আছে কি?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস পুরনো ঢাকায় অবস্থিত হওয়ায় এর আশেপাশে মেস বা ভাড়া বাসার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি নারী আবাসিক হল রয়েছে। কেরানীগঞ্জে নতুন ক্যাম্পাস চালু হলে আবাসন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
উপসংহার
আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি আপনাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটি সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পেরেছে। আপনি জেনেছেন এটি কোথায় অবস্থিত, এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, নতুন ক্যাম্পাসের স্বপ্নীল যাত্রা এবং এর আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার এক গৌরবময় অধ্যায়। এর শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞান অর্জন করে না, তারা দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথেও পরিচিত হয়।
যদি আপনার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার কৌতূহল মেটাতে আমরা সবসময় প্রস্তুত!
Comments